শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩৫ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
বাউফলে উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে ঐতিহাসিক ৭নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালিত নারীকে কু/পি/য়ে জখম, শ্লীলতাহানির অভিযোগ গর্ভবতী গরু জবাই ও মাংস বিক্রির দায়ে কসাইকে অর্থদণ্ড ও কারাদন্ড কলাপাড়া জাটকায় সয়লাব।। অভিযান শুধু সড়কে সংখা দিয়ে নয়, মানসম্মত শিক্ষাই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ….এবিএম মোশাররফ হোসেন ভোট যেন না হয় সে ষড়যন্ত্র চলছে : সরোয়ার বরিশালের ১৬টি আসনে বিএনপির প্রার্থী যারা বরিশালের পাঁচটি আসনে বিএনপির প্রার্থী হলেন যারা জরাজীর্ণ ভবনে প্রাণভয়ে ক্লাস করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পূন্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো রাসপূজা, মেলা চলবে ৫ দিন বরিশালে ভোক্তা অধিকার বিষয়ে সামাজিক সংগঠনদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত বাউফলের এস. এম. জালাল সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত পটুয়াখালীর লোহালিয়ায় বাজার ইজারা নিয়ে দুগ্রুপের সংঘর্ষে চাঞ্চল্য কর হত্যা মামলার আসামী র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার কুয়াকাটায় এক কোরাল মাছ ২৬ হাজার টাকায় বিক্রি চাকরিতে বহাল ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পেতে বরিশালে স্মারকলিপি
প্রিয় মানুষ তপা দা’র মৃত্যু ও কিছু কথা…..

প্রিয় মানুষ তপা দা’র মৃত্যু ও কিছু কথা…..

Sharing is caring!

বেলায়েত বাবলু : প্রিয় মানুষদের না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার তালিকায় আরেকটি নাম যোগ হলো আরেকটি নাম। তপন কুমার সাহা, আমাদের সকলের প্রিয় তপা দা আর নেই। শুক্রবার বরিশাল সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় তিনি পরলোকগমন করেন।

বরিশাল নগরীতে বসবাস করেন অথচ তপাকে চিনতেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সদর রোড, হাসপাতাল রোড, লাইন রোড, বাজার রোড, স্ব রোড আর ভাটিখানা তপার বিচরন থাকলেও তাকে চিনতো পুরো নগরবাসী। ভাটিখানা ষোল বাড়ীর বাসিন্দা তপা যৌবনকালে দর্জির কাজ করতেন এ তথ্যটি আগে জানতাম না। শুনেছি তপা একটি মেয়েকে ভীষন ভালবাসতো। তাইতো পরিবারের সদস্যরা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশ ত্যাগ করলেও তপা দেশ ত্যাগ করেননি।

তপার বাল্য বন্ধু ভাটিখানা পুজা উদযাপন পরিষেদর সহ সভাপতি দিলীপ কুমার দাসের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাবা রঙ্গলাল সাহা ছিলেন মুদি ব্যবসায়ী। ছোটকাল থেকেই তপা কিছুটা অলস প্রকৃতির থাকায় তার বেশীদিন দর্জির কাজ করা হয়ে উঠেনি। ৫ ভাই আর ৪ বোনের মধ্যে তপা ছিলো তৃতীয়। বাবা মা, ভাই ও বোনেরা দেশত্যাগী হওয়ার পর তপা আর সংসারের ব্যাপারে মনোযোগী হয়নি। শুরু করে যাযাবরী জীবন। রাজপথই ছিলো তার ঠিকানা। সারাদিন এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লা ঘুরে কারো কাছ থেকে ১০ টাকা করে চেয়ে খাবারের টাকা জোগাড় হলেই তপা ছুটে যেতো কোন খাবারের হোটেলে। দুবেলা অন্যের কাছ থেকে খাবার খেয়ে রাতে কোন এক সড়কের কোন দোকানের কোনায় তপা আশ্রয় নিতো। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষাকে সাথে নিয়েই বছরের পর বছর এভাবেই কাটিয়ে দিয়েছে অনুমান ৬৮ বছর বয়সী তপা।

তপা পাগলা হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত থাকলেও সে পুরোদস্ত পাগল ছিলো এটা বলা যাবেনা। মাানুষের কাছ থেকে চেয়ে খেলেও তপা কোনদিন কারোর ক্ষতি করেছে এরকম নজির পাওয়া যাবেনা। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটিয়ে দেয়া তপা সবসময় হাসি মুখে থাকতো। স্বল্প শিক্ষিত তপাকে নিয়মিত পেপার পড়তে দেখা যেতো। নাপিত বলে যারা তপাকে ক্ষেপিয়ে মজা নিতো তারাও দিনশেষে তপা খেলো কিনা খোঁজ নিতো।

কিছুদিন পূর্বে হঠাৎ তপা অসুস্থ হয়ে পড়ে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে রাস্তার এক কোনায় পড়ে থাকতে দেখে অনেকেই বিচলিত হয়ে পড়ে। বাজার রোডের কিছু লোক উদ্যোগী হয়ে তাকে বরিশাল সদর হাসপাতালে ভর্তি করায়। খবর পেয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ তপার চিকিৎসার খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থা তদারকিরও ব্যবস্থা করেন। টানা কয়েকদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় শুক্রবার সকালে তপার মৃত্যু হয়। পরে বরিশাল মহা শ্মশানে তার অন্তেষ্ট্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তপার শেষকৃত্যর জন্য খরচ হওয়া সকল অর্থ তিনি বহন করবেন।

তপা চলে গেছেন না ফেরার দেশে। কিন্তু সকলের কাছে প্রিয হওয়ায় তার লাশ হাসপাতালে পড়ে থাকেনি। মেয়রসহ অন্যদের সহায়তায় যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় তপা সমাহিত হয়েছে। তপার অসুস্থতা আর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে নেয়া পদক্ষেপে মনে হয়েছে আমরা অনেক মানবিক। আমাদের নগরে যেমন মানবিক মেয়র আছেন তেমনি মানবিকতা সম্পন্ন অনেক মানুষ। রয়েছেন। তপা কেন সকলের কাছে প্রিয় ছিলো এর উত্তর পাওয়া যাবেনা হয়তে। কিন্তু আগামীতে এখানকার মানুষেরা তপাকে স্মরণ করে বলবে আমাদের এক তপা পাগলা ছিলো।

লেখক: সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়ন।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD